নিঃস্বার্থভাবে ৫০ বছর ধরে মানুষের শেষ বিদায়ের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। কবর খুঁড়ে গেছেন , পারিশ্রমিক নেননি। অচেনা-অজানা মানুষের দাফনে সাহায্য করে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু ব্যয় করেছেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সী কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের এই নিঃসন্তান মানুষটি হলেন মনু মিয়া।
এই মানুষটিই আজ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। গত ১৪ মে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। স্ত্রী রহিমা বেগম ছায়ার মতো আছেন পাশে। তবে শরীরের চিকিৎসার পাশাপাশি যেটি এখনো তাঁকে জানানো হয়নি, সেটি হলো তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী-ঘোড়াটির নির্মম মৃত্যু।
কবর খুঁড়তে দূরের যাত্রা সহজ করতে নিজের ধানী জমি বিক্রি করে কয়েক বছর আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। সেই ঘোড়াই ছিল তাঁর একমাত্র বাহন, একমাত্র নির্ভরযোগ্য বন্ধু। গত শুক্রবার সকালে মিঠামইন উপজেলার হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশের জলাশয়ে মৃত অবস্থায় ঘোড়াটিকে পাওয়া যায়। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন-এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি ছিল নির্মম হত্যাকাণ্ড।
স্ত্রী রহিমা বেগম বললেন, “উনার (মনু মিয়ার) অবস্থা ভালো না। এতদিন জানতাম, মানুষ উনাকে ভালোবাসে। অথচ এমন একজন মানুষের প্রিয় সঙ্গীকে এভাবে মেরে ফেলা হলো! খবরটা যদি উনাকে দিই, উনি হয়তো আর সহ্যই করতে পারবেন না।”
স্থানীয়রা বলছেন, মনু মিয়া শুধু একজন গোরখোদক নন, তিনি ছিলেন একজন মানবসেবী। দুর্গম হাওরের বহু অঞ্চলে, এমনকি রাজধানীর বনানী কবরস্থানেও রয়েছে তাঁর সুনাম। প্রতিটি কবর খুঁড়েই কাজ শেষ করেননি, মৃতদের মৃত্যুর তারিখ, পরিচয়, সব কিছু সংরক্ষণ করেছেন নিজের হাতে লেখা ডায়েরিতে। এখন পর্যন্ত তিনি ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিবেশী এস এম রিজন। তিনি বলেন, “মনু মিয়া সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর প্রিয় ঘোড়াটিকে এমনভাবে হত্যা করা খুবই নিন্দনীয় ও নির্মম। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার জানান, মিঠামইন থানাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।