‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনীপরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’—কবি কামিনী রায়ের এই জনপ্রিয় চরণগুলো অনেকেরই জানা। তবে এর অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝেন ক’জন? বরং টমাস হবসের উক্তিই এখন বেশি প্রাসঙ্গিক, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক।’ আজকের দিনে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের স্বার্থ নিয়ে বেশি চিন্তা করে। ফলে সমাজে মানবিকতার চর্চা কমে গিয়ে মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে।
তবুও সমাজের এই প্রচলিত স্বার্থপর মানসিকতাকে অগ্রাহ্য করে কিছু মানুষ নিজেদের অন্যের সেবায় নিবেদন করেন। এমনই একজন মানবসেবক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা।
অধ্যাপনায় তিনি যেমন প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে উন্মুক্ত প্রান্তরে শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী শিক্ষা দেন, তেমনি তার মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছে।
২০১২ সালে তিনি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে বাবা-মায়ের নামে “ডা. শামসুল হুদা ও আঞ্জুমান আরা সেবাকেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবছর সেখানে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে তার সেবার পরিধি কেবল ওই এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে দেশের ৩৫টি জেলায় তার সেবাকেন্দ্রের অধীনে অর্ধ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
সম্প্রতি তিনি গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে ভ্রমণ করে সেখানকার শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গাইবান্ধায় একশো পরিবার এবং কুড়িগ্রামে সাড়ে তিনশো পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি দুই জেলাতেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। তার এই কাজে সহায়তা করেছেন সেবাকেন্দ্রের উপদেষ্টা এস. এম. ইমরান আজাদ। তিনি পেশায় একজন আয়কর আইনজীবী এবং ক্বারী নূর মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
দুই জেলার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের দুস্থ মানুষের কাছে এই সেবা পৌঁছে দিয়েছেন ড. রেবেকা সুলতানা। এছাড়াও নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও এ তিনি শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন জেলাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে।
এর আগে বন্যার সময় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও কক্সবাজারেও তিনি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া, যে কোন জেলায় কোন মানবিক বিপর্যয়ের খবর পেলে তিনি সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন।
ড. রেবেকা সুলতানার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সবগুলো জেলায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে চান।স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একটি করে সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি।
শুধু সরাসরি সেবামূলক কার্যক্রম নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার পেইজে নিয়মিত পোস্ট করা জীবনমুখী বক্তব্যের ভিডিওগুলো তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষের মনে দারুণ প্রভাব ফেলছে। তার ভিডিওগুলোতে সৎ, স্বচ্ছ, শিক্ষিত, মানবিক এবং হতাশামুক্ত জীবন গঠনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেকেই মন্তব্যে জানিয়েছেন, তার কথা শুনে তারা নিজেদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।
অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা তার নিঃস্বার্থ কাজ ও মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।