আমরা দীর্ঘ দিন বাঁচতে চাই। অথচ টাকা দিয়ে অসুখ কিনে খাই। আর এই অসুখই আমাদের মৃত্যুর দারগোড়ায় পৌঁছে দেয়। মানুষ খাবার জন্যে বাঁচে না বরং বাঁচার জন্যেই খাবার খায়। কিন্তু সেই খাবার যদি হয় স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। তাহলে সত্যি এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা প্রায়শ রাস্তার পাশের ফুটপাতের খোলা খাবার খেয়ে থাকি। এগুলো কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত?
এই খোলা খাবারগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অথচ আমরা জেনে বা না জেনে এই খাবার গুলোই খাচ্ছি। কারণ এই খাবারগুলো সহজলভ্য, দামে কম এবং স্বাদযুক্ত। চাইলেই হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে এগুলো । কিন্তু মুখরিত এই খোলা খাবারগুলোই আামদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এসব খাবার গ্রহণের ব্যাপারে চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, “রাস্তার পাশে খোলা খাবার গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও কলেরা হয়। আবার লিভার, ফুসফুস ও ব্রেনের জটিল রোগও হতে পারে।”
এছাড়াও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ”খোলা খাবারে হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।”
চলতি বছরের শুরুতে আমরা জেনেছি, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা শীর্ষস্থানে। ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল বিপদসীমায়। যা ঢাকায় বসবাসের অনুপযুক্ত। অথচ ফুটপাতের যে খাবারগুলো আমরা খাচ্ছি, তা ঢেকে রাখা হয় না, আলগা বা খোলা থাকে। বাতাসের সাথে ধুলিকণাসহ নানা রোগজীবাণু এই খোলা খাবারে মিশে যাচ্ছে। আর এই খাবারগুলো গ্রহণে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের শরীরে। দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমরা। আর এই অসুস্থতার কারণে ঢলে পড়ছি মৃত্যুর কোলে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে প্রতিবছর দূষিত খাবার খেয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মারা যায়, আর অসুস্থ হয় ১৫ কোটি মানুষ।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খোলা খাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ খোলা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয় এবং প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ মারা যায়। এছাড়াও ৫ বছরের চেয়ে কম বয়সি শিশুদের ৪৩ শতাংশই অনিরাপদ খাবারজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তাই খোলা খাবার গ্রহণ রোধে আমাদের জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে। এই খাবারগুলো গ্রহণের ক্ষতিকর দিকগুলো জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বা পোস্টারে বিস্তারিত বিবরণের মাধ্যমে অথবা টেলিভিশনে সম্প্রচারের মাধ্যমে আমরা সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি। এছাড়াও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য অধিদপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে দূষিত খাবার রোধে জোরালো কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি অত্যন্ত জরুরী।
লেখক
মোফাজ্জল হোসেন
শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখক