ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী ইউনিক রোড রয়েলসের আমরী ট্রাভেলস নামের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতদের দখলে ছিল বাসটি। এসময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার (১৭ই ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ছাড়ার পর গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার মধ্যে এই ডাকাতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বাসে অন্তত ৬০-৬৫ জন যাত্রী ছিলো।
বাসের যাত্রীরা ডাকাতির লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বাসের এক যাত্রী ছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের ২২ বছর বয়সী সোহাগ। তিনি ব্যবসার কাজে এই গ্রামেরই ওমর আলীর সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন।
তিনি জানান, যাত্রীবোঝাই গাড়ি হঠাৎ থামিয়ে দেয় বাসের চালক। এসময় আরও সাত-আটজনকে তারা গাড়িতে তুলে নেয়। তাদের মধ্যে একজন বাসের চালকের আসনে বসে পড়েন। তার অপর সহযোগীরা যাত্রীদের কাছে গিয়ে চাকু ধরেন এবং লাইট জ্বালাতে নিষেধ করেন।
তিনি বলেন, সবার সামনে ওরা চাকু নিয়ে দাঁড়ায়ে ছিল। পাঁচ-ছয়জনকে ছুরিও মারে ওরা। এই ভয়ে কেউ কোনও কথা বলেনি। সবার মাথা নিচু করে ছিল। ওরা বলছিলো, চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিবো।
সোহাগ ও ওমর আলীর কাছে ব্যবসার এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা টাকা চাইলে তারা ২০ হাজার টাকা বের করে দেন। কিন্তু গাড়ির চালক জানায় যে তাদের কাছে আরও টাকা আছে।
সোহাগ জানান, আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ওরা আমায় নিচে ফেলে আমার বুকের ওপর পাড়া দিয়ে রাখছে, টাকা না দেওয়া পর্যন্ত। আর ওরা বাস থেকে না নামা পর্যন্ত আমায় নিচেই রাখছে।
তিনি জানান, এসময় তারা মাথা উচু করতেও পারছিলেন না। তারা কেবল এক মহিলার চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শুনতে পান।
বাসে দুই জন নারী যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন একজন হিন্দু এবং তাদের সিট ছিলো বাসের মাঝামাঝি। ডাকাতদের মধ্যে একজন হিন্দু নারীকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। এসময় ঐ নারীর স্বামী বাঁধা দিলে তাকে প্রচন্ড মারধর করা হয় বলে তিনি জানান।
সোহাগ বলেন, “এরা যে পরিমাণ… উনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। পিছে নিয়ে গেলে উনি অনেক চিৎকার করছিলো। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিলো না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদতেছিলো। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।”
ঐ বাসে ছিলেন মজনু আকন্দ নামের ৭৩ বছর বয়সী এক গুড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “ওই রাতে আমরা যে চিল্লাচিল্লি শুনছি… তাতে মা-বোনের ইজ্জতের…গাড়ির ভেতরে আমাদের কোনও ভাষা ছিল না। ওনাদের মানসম্মানের ক্ষতি করছে, ধস্তাধস্তি করছে।”
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। অনেক যাত্রীই রাস্তায় নেমে গেছেন। দুজন নারী যাত্রী এসেছিলেন। তাঁদের একজনের বাড়ি নাটোরের লালপুরে, আরেকজনের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দিকে। তাঁরা তাঁদের নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তাঁরা চলে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও তাঁর কাছে নেই। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘ধর্ষণের এই খবর কে কীভাবে ছড়াল, এটা নীতিনৈতিকতার ব্যাপার তো মানতে হয়।’
এদিকে ডাকাতির ঘটনায় আটক বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারী বুধবার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।