দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নতুন ঢেউ তুলেছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগের গুঞ্জন।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা তাকে জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অসংযত পরিস্থিতিতে তার পক্ষে কাজ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে বিএনপি সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি তুলেন। অন্যদিকে এনসিপিও বিএনপির দিকে ঝুঁকে যাওয়ার অভিযোগে কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চান। এছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে বিভিন্ন আন্দোলন, রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই। এসব মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেছেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালকের বক্তব্য আবারও নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা ইতিপূর্বে অনেক বার উত্থাপন করেছি।’
গতকাল এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে অপ্রত্যাশিতভাবে আসা বিভাজন মিটিয়ে ফেলতে হবে। আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশী-বিদেশী দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পায়তারা করবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের খবরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সর্বদলীয় ঐক্যের জন্য বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।
ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও তার হতাশার কথা জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেন, একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।
অন্যদিকে অপর ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম পূর্বের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে দুঃখপ্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেন, পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী শ্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্টীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ থাকা জনগণের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা রয়েছে । এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে পড়বে এবং দেশের রাজনীতিতে এক অনিশ্চিত অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। চলমান এই সংকট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর রাজনৈতিক সংলাপ এখন সময়ের দাবি।