ভোর ছয়টা বেজে বিশ মিনিট। মায়ের ফোনে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ফোন রিসিভ না হয়ে কেটে দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টা বেশ অবাক করার মতো! কিছুক্ষণ পর আবার কল দিলাম, মা রিসিভ করে আমার সালামের জবাব দিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, “মা! এতক্ষণ কল রিসিভ না করে কেন কেটে দেওয়া হলো?”
মা আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে পাশে কাউকে চেঁচামেচি করতে শুনলাম। আমি আবার মা-কে প্রশ্ন করলাম, “কি হয়েছে মা?” তখন মা একটু কাঁপা গলায় বললেন, “তোমার ভাতিজি রাফিয়া, তাকে নিয়ে আর পারছি না। তার অভ্যাস এতটাই বদলে গেছে যে, ফোন না দিলে সে কিছুই খায় না, পড়তে বসে না। এখন শুধু ফোন নিয়ে সারাদিন রুমে বসে থাকে। কারো সাথে কথা বলতে চায় না, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনা।”
মায়ের কথা শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি মায়ের সাথে কথা শেষ করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম। রিকশায় আরও তিনজন আমার সঙ্গী হলো। আমরা রিকশায় চারজন যাত্রী ছিলাম। সেখানে এক ব্যক্তি আরেকজনকে বলছিলেন, “আমার সন্তান এখন ফোনের জন্য প্রায় অন্ধ হওয়ার পথে। এখন সে ফোন ছাড়া চলতেই চায় না।”
এটা শুনে আমি একটু চিন্তিত হয়ে ভাবতে শুরু করলাম, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে?
মায়ের কাছে আবার কল দিলাম, জানতে চাইলাম, “রাফিয়ার মোবাইল আসক্তির কারণ কি?” মা জানালেন, “প্রতিদিন সকাল হলে ভাবি তাকে ফোন দেখিয়ে বসিয়ে রাখে, তারপর ফোনে কী যেন দেখতে দেখতে তাকে খাবার খাওয়ায়। আর এইভাবেই ধীরে ধীরে সে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে। এখন সে ফোন ছাড়া কিছুই ভাবতে চায় না।”
এভাবেই আমরা কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি? আমরা তাদের মেধাশূন্য করতে সাহায্য করছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং এর পিছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে বাবা-মা। তারা সন্তানকে সময় না দিয়ে মোবাইল ফোনকে তাদের পরম বন্ধু বানিয়ে ফেলছেন।
আমাদের সোনালী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই আসক্তির জগত থেকে বের করে আনতে হবে। তাদের ভেতরে থাকা মেধা ও সৃজনশীলতার বীজকে লালন করতে হবে, যাতে তারা উন্নত বিশ্বের শীর্ষে জায়গা করে নিতে পারে। মোবাইল ফোনের এই ধোঁকা থেকে মুক্ত হয়ে, আমরা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক দেশ গঠন করতে পারবো।
আজকের সতর্কতা আমাদের আগামী দিনের জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে। এখন থেকেই আমাদের পরিবর্তন শুরু করতে হবে। আসুন, আমরা একত্রে শপথ নিই:
আর নয় সন্তান মোবাইল আসক্তি,
বৃদ্ধি হোক মেধার শক্তি!
বেড়ে ওঠো- সতর্ক হও ছাত্র সমাজ,
এই দেশ পরিবর্তন করা তোমর-ই কাজ।
লেখক,
সোহেল হোসাইন
চাঁদপুর সদর,চাঁদপুর।