প্রত্যেক সন্তানই তাঁর পিতামাতার কাছে অমূল্য সম্পদ, ভালোবাসার ফসল। সন্তানের ভরনপোষণের জন্য পিতামাতাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক সময় পিতামাতা নিজেরা না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন।
সব পিতামাতাই তাদের সন্তানকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাই পিতামাতা তাদের সন্তানদের হাতে ধরে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। সন্তানকে যেন সমাজের উচ্চ স্থানে নেয়া যায় তার জন্য পিতামাতার প্রচেষ্টার অন্ত নেই। পিতামাতার সাথে সন্তান যত অন্যয়ই করুক না কেন পিতামাতা সব মেনে নিয়ে বরং সন্তানের জন্য বুকভরে দোয়া করে। এতকিছুর পরও শোনা যায় বৃদ্ধ পিতামাতার আর্তনাদ, আর্ত-চিৎকার।
বাবা-মায়ের একটাই আশা শেষ জীবন যেন তাদের সন্তান,নাতি,নাতনি, পরিবার,পরিজনের সাথে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে, হাসি- খুশি কাটাতে পারে। কিন্তু সন্তান যত বড় হয়, দূরত্ব তত বাড়তে থাকে। এক সময় গিয়ে সন্তানেরা নিজেরা পরিবার গঠন করে, নিজেরাও পিতামাতা হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে নিজেদের পিতামাতার ত্যাগ,শ্রম,সাধনার কথা ভুলে যায় তারা। ভুলে যায় নিজেদের অতীত ইতিহাসের কথা, বাবা-মায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। পরিশেষে বৃদ্ধ বাবা-মাকে আশ্রয় নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এসে কোনদিন খোঁজ-খবরও নিতে যায়না সন্তান। সে চিন্তা করে না তাকেও একদিন বৃদ্ধ হতে হবে,তখন তার কি হবে?
আপনি সন্তান হিসেবে যদি আপনার বৃদ্ধ পিতামাতার সঠিক পরিচর্যা করেন,তাদের সাথে বৃদ্ধ বয়সে ভালো ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার সন্তানও আপনার বৃদ্ধ বয়সে আপনার সঠিক পরিচর্যা করবে,আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। অন্যথায় আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতামাতার সাথে যেমন আচরণ করবেন, তেমন আচরণ আপনি নিজ সন্তানের কাছ থেকেও উপহার হিসেবে পাবেন।
সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করা, সঠিক পথে পরিচালনা করা যেমন পিতামাতার দায়িত্ব, তেমনি পিতামাতার বৃদ্ধ বয়সে সঠিক পরিচর্যা করা ও দেখাশুনা করা সন্তানের কর্তব্য। আমাদের মানসিক চিন্তা, বিবেককে পরিবর্তন করতে হবে, তাহলেই বৃদ্ধাশ্রম মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়া সম্ভব।
‘আজ আমি সন্তান
কাল পরিবর্তন হবো বাবায়
আমাকে যেন পড়তে না হয়
বৃদ্ধাশ্রমের থাবায়’।
লেখক
সোহেল হোসাইন
শিক্ষার্থী, দারুণ নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা, ডেমরা।