ভোরবেলার সৌন্দর্য বোঝাতে ‘কাক ডাকা ভোর’ – এই শব্দালংকারের ব্যবহার আমাদের অতি পরিচিত। কিন্তু এখনকার ভোরগুলো কেমন জানি! কাকদের শোরগোল অতটা আর কানে বাজেনা। প্রকৃতির সুরক্ষাকারী পক্ষীকুলের এই প্রজাতি এখন অপ্রতুল। প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত অপর এক পাখি শকুন। এই পাখিটাও এখন বিলুপ্তপ্রায়। প্রকৃতির নগরী থেকে ইতোমধ্যেই ৯৯ শতাংশ শকুন হারিয়ে গেছে।
কাকের সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের অভিযোগের সীমা নেই, তার গাঁয়ের রং, কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ, অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমাদের বিপুল ঘৃণাবোধ রয়েছে। ওদিকে শকুন দেখলেও আমরা নাক ছিটকাই। অথচ তারা যে আমাদের কত উপকারী, সুরক্ষাকারী তা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। পৃথিবীর সবকিছুর অন্তরালে আমরা সৌন্দর্যের সংজ্ঞা খুঁজে বেড়াই। কিন্তু কিছু অসৌন্দর্যের ভেতরে যে অসংখ্য সৌন্দর্যের উপাদান নিয়মিত খেলা করে তা আমাদের ভাবনাগুলোতে উপেক্ষিতই থেকে যায়।
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে চালাক হলো কাক। খাদ্যগ্রহণ ক্রিয়া সম্পন্ন হলে এরা নানা ধরণের পাজল সমাধান করতে সক্ষম। এদের কন্ঠ নিয়ে নানা আপত্তি থাকলেও ভেরিয়েশন কিন্তু কম না। প্রায় আড়াইশো প্রকারের ডাক তাঁদের কন্ঠ থেকে বেড়োতে পারে। সভা-সমাবেশে তারা সিদ্ধহস্ত। বলা হয়ে থাকে তাঁদের মধ্যে গণতান্ত্রিক স্বভাব বিদ্যমান। ঘুনে ধরা অগণতান্ত্রিক পৃথিবীতে কাকরাও আমাদের লিমিটেড হলেও ঐক্যের শিক্ষাটা কিন্তু দিতে পারে।
এই যে চারিদিকে ময়লার স্তুপ, নানান জিনিস পঁচে-গলে একাকার। সেগুলোতে দলবেঁধে বেড়াচ্ছে ক্ষতিকর জীবানু, ভাইরাস। ক্রমাগত বংশ বাড়িয়েই চলেছে। এই জীবানুগুলোকে কুপোকাত করে এই ঘৃণিত পাখি দুটোই – কাক, শকুন। প্রকৃতিতে হয়ত আরও কিছু উপকারি কীটপতঙ্গ রয়েছে। তবে এ দু’জনের ভূমিকাটা অগ্রগন্য। এই উপকারী পাখি দুটো সংরক্ষণে পর্যাপ্ত গবেষণা প্রয়োজন।