ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা প্রতিষ্ঠিত ডাঃ শামসুল হুদা ও আঞ্জুমান আরা সেবাকেন্দ্রের উদ্যোগে সারা দেশের হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তার জন্য একটি বিশেষ সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীরা অল্প পরিমাণ বকেয়া বেতন বা ফি দিতে পারছেন না, তাদের বেতন বা ফি পরিশোধ করে দিতে চায় এই সেবা প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার রাতে ড. রেবেকা সুলতানার ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট থেকে এই সেবা কার্যক্রমের কথা জানা যায়।
পেজের এডমিনের বরাতে পোস্টে বলা হয়, আজকের ‘প্রথম আলো’র মতামত পাতায় ‘পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে আত্মহত্যা কেন’ শিরোনামে একটি কলাম ছাপানো হয়েছে। সেখানে আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর মাহফুজ নামের রংপুরের পীরগাছার অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় তাকে পরীক্ষায় রুম থেকে বের করে দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে সে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে স্কুলের বেতনের মাত্র ৮০ টাকা বকেয়া ফি দিতে না পারায় চাঁদপুরের এক অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আত্মহত্যা করে। এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে কলামে।
পোস্টে আরও বলা হয়, দেশের যে কোন প্রান্তে যে কোন শিক্ষার্থী এ ধরণের স্বল্প পরিমাণ বেতন, পরীক্ষার ফি দিতে না পারলে আমাদের জানালে আমরা তা পরিশোধ করে দিবো।
সেবা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে পোস্টে বলা হয়, ড. রেবেকা সুলতানা প্রতিষ্ঠিত ডা. শামসুল হুদা ও আঞ্জুমান আরা সেবাকেন্দ্রের উদ্যোগে এই বিশেষ সহায়তা কার্যক্রম চলবে। সেবা পেতে ০১৩৩১৫০০৩৯৬ নম্বরে মেসেজ করে বিস্তারিত জানালেই আমাদের প্রতিনিধি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবে। কোন স্কুলে এ ধরণের শিক্ষার্থী থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
পোস্টে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষকদের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, যারা অর্থাভাবে বেতন বা ফি দিতে পারছে না তাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় রাখবেন। তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। নিজেদের অবস্থান থেকে তাদেরকে সহায়তায় কাজ করবেন, প্রয়োজনে ফান্ড গঠন করবেন । আর কোন প্রাণ এভাবে না ঝরুক।
উল্লেখ্য, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে অবস্থিত ড. রেবেকা সুলতানার এই সেবা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে এই প্রতিষ্ঠানটি চালান তিনি। প্রতিবছর সেবাকেন্দ্র প্রাঙ্গণে বড় পরিসরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ঐ অঞ্চলের অন্তত ১৫০-২০০ রোগী বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন এবং তাদেরকে ঔষধও ফ্রি দেয়া হয়। এছাড়া শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থদের স্বাবলম্বী করতে নানা উপকরণ বিতরণ, ফলের ঋতুতে দরিদ্রদের জন্য ফল উৎসব, কোন দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে সেই দ্রব্য বিতরণ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্য করা সহ নানাবিধ সেবা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সারা দেশের অন্তত ৫০ জেলায় এই সেবাকেদ্রের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরাও সেবা পাবেন এবং তাদের নিজ অঞ্চলের মানুষরাও সেবা নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই সেবা প্রতিষ্ঠানটি সেবা কার্যক্রম চালিয়েছে। সেবা পেয়েছে হাজারো মানুষ।