আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে পথশিশু ফাতেমা বলছিলো, “আমরা একবেলা ডাল ভাতই খাইতে পাইনা, ঈদে কি গরুর গোস্ত খাইতে পাইমু?” এটা শুধু এক ফাতেমার কথা নয়, লক্ষাধিক পথশিশু ও ক্ষুধার্ত মানুষের শঙ্কা। ঈদ মানে আনন্দ হলেও, আনন্দ নেই পথশিশুদের মনে, ক্ষুধার্তদের হৃদয়ে, মুখে আছে শুধু দুঃশ্চিন্তা আর কষ্টের ছাপ।
স্ট্রিট সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ (২০২৪) তথ্যানুযায়ী- দেশে ৩৪ লাখেরও বেশি পথশিশু রয়েছে। যারা মা-বাবার স্নেহ-মমতা, যত্ন-ভালোবাসা ছাড়াই রাস্তায় বড় হচ্ছে। যার মধ্যে শুধু ঢাকায়-ই ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু রাস্তায় বসবাস করছে, (Human Appeal USA প্রতিবেদনানুযায়ী)। এই বৃহৎ সংখ্যাধিক পথশিশুর ঈদ আনন্দ নিয়ে কি দেশের সরকার কর্তৃপক্ষ বা দেশের সম্ভ্রান্ত শ্রেণীরা কিছু ভাবছেন?
কুরবানীর ঈদ মানেই ত্যাগ। আর এই ত্যাগ হতে হবে মহান আল্লাহর জন্য। তাই আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পথশিশুদের জন্যেও কিছু ত্যাগ করতে পারি। কুরবানী ঈদের অন্যতম প্রধান উপাদান গোস্ত ফ্রিজ ভরাট না রেখে পথশিশুদের মুখে তুলে দিয়ে ঈদের আনন্দটা একটু ভাগাভাগি করে নিতে পারি। শুধু পথশিশুই নয়, দেশে রয়েছে বৃহৎ সংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষও বটে।
সরকার ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কর্মসূচির যৌথ গবেষণা মতে, বাংলাদেশে ৪ কোটি মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত থাকে, যা মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ, যদিও প্রতিবেদনটি ২০১৬ সালের। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা জরিপানুযায়ী (২০২৪)- দিনে একবেলা খাবার না পাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ জন, যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ।
এই দারিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মনেও ঈদ আনন্দের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যারা একবেলার খাবার যোগার করতে হিমশিম খাই, যাদের পেতে ক্ষুধা, মনে অনিশ্চয়টার আশঙ্কা, কপালে দঃখের ছাপ, তাদের ঈদ আনন্দ আসবে কোথা থেকে। এদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার দায়িত্বটাও কিন্তু আমাদেরই বা দেশের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ অথবা দেশ প্রধানের উপরেই বর্তায়।
আসুন ঈদের আনন্দ হোক সবার জন্য। আমরা প্রত্যকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্যনুযায়ী, রাস্তায় বা বস্তিতে বসবাসকারী ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের মুখে হাসি ফুটায়।
পথশিশুদেরকে পথশিশু না ভেবে সন্তানতুল্য স্নেহ দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, তাদের মুখে তুলে দেয় ঈদ আহার, আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। আর যারা দারিদ্র বা ক্ষুধার্ত আছেন, তাদেরকেও পরিবারের সদস্যতুল্য ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেয়, মুখে দেয় ঈদ আহার, ফুটায় হাসি। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগিতে আমরাও সবাই ভালো থাকি। আমাদের দেশ, দেশের মানুষগুলোও আমাদের ভাই, বোন বা সন্তান। তাই তাদের ভালো রাখার দায়িত্বটাও আমাদেরই। আর পবিত্র ঈদ আনন্দ, আমাদের সকলের জন্য।
লেখক
মোফাজ্জল হোসেন (শান্ত)
শিক্ষার্থী,ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।