ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গতকাল বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। আজ (সোমবার) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সোস্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়।
নুসরাতের সহকর্মীরা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। কেউ কেউ ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। তাঁদের দাবি, একজন শিল্পীকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে আদালতে উপস্থাপনের সময় ফারিয়ার আইনজীবী দাবি করেন, যেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই সময় নুসরাত দেশে ছিলেনই না।
প্রাপ্ত তথ্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, ১২ জুলাই তিনি কানাডায় যান। তিনি সফলভাবে কানাডা পৌঁছেছেন বলেও জানান দেন। এরপর থেকে নিয়মিতই কানাডার ক্যালগেরি শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও তিনি ফেসবুকে শেয়ার করে আসছিলেন। এসব আয়োজনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিল্পী জায়েদ খানসহ অন্যরাও।

তবে তিনি কানাডায় বসে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়েও ছিলেন সক্রিয়। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ঘটলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ৬ জন। ১৭ জুলাই তিনি পোস্ট করেন,‘কাজের কারণে আমি হাজার মাইল দূরে। কিন্তু আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমি কেমন অনুভব করছি, তা প্রকাশ করতে পারছি না। সর্বোপরি আমরা মানুষ, এই সত্যটি ভুলতে পারি না। দোয়া করি সবাই নিরাপদে থাকুন।’

এরপরদিন, ১৮ জুলাই, পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থীদের জানাজার একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, “জাতি হিসেবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।” এই স্ট্যাটাসটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাঁর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেন অনেকেই।

১৯ জুলাই তিনি আরও এক পোস্টে বাংলাদেশের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “দুই দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই… আমরা কি সত্যিই আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি না?”
একইভাবে ২৩ জুলাই তিনি জানান, “৬ দিন হয়ে গেল, বাবা–মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি। বাবার স্বাস্থ্য ভালো না, কিন্তু দেশের শিক্ষার্থীদের জন্যই আমি বেশি চিন্তিত।”

আগস্টের ৩ তারিখে তিনি বৃষ্টিতে ভিজে শহীদ মীনারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের পতাকার ইমোজি জুড়ে দেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি সংসদ ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার একটি ছবিও পোস্ট করেন, সেখানেও তিনি বাংলাদেশের পতাকার ইমোজি ব্যবহার করেন।

তবে আগস্টের পর থেকে ফারিয়াকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তেমন কোন পোস্ট করতে দেখা যায়নি। তিনি বরং ব্যস্ত ছিলেন ব্যক্তিগত জীবনের ছবি, মডেলিং ও শো-বিজ জগৎ নিয়েই। তবে দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যার সময় তিনি সোস্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টা অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। আইনজীবীরা বলছেন, যেহেতু ফেসবুক পোস্টসহ বিভিন্ন প্রমাণে দেখা যাচ্ছে তিনি মামলার সময় দেশে ছিলেন না, সেক্ষেত্রে এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।