ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এটিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারকে দায়ী করছে।
বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার হুমকি ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে হামলা চালায় এবং বাড়ির একাংশে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিএনপি দাবি করেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার ঘটনায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, “আমাদের হাতে এ ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে এটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির জানান, “এই হামলায় ছাত্রদলের কোনো ভূমিকা নেই। গণঅভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “এই ধরনের ঘটনার জন্য শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যই দায়ী। তিনি ক্ষমতা হারিয়েও দেশে অস্থিরতা তৈরি করছেন।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ওপর হামলা দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধ্বংসের একটি প্রয়াস। যারা এটি ঘটিয়েছে, তারা ইতিহাসের কলঙ্ক হয়ে থাকবে।”
আওয়ামী লীগ নেতারা আরও অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধী দলগুলোর উসকানিতেই এ হামলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতন্ত্রের নামে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এদিকে নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরাও এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বিবৃতিতে বলা হয়, “৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিফলন নয়, এটি জাতির ইতিহাসের ওপর সরাসরি আঘাত।”
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের নামে প্রতীকী স্থাপনা ভাঙার চেয়ে গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশই বেশি জরুরি।”
বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণঅধিকার পরিষদসহ একাধিক সংগঠন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, “সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণেই এত বড় হামলা সম্ভব হয়েছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।”