দিন শেষে রাত্রি আসে। আবার রাত্রি গড়িয়ে দিন, এভাবে কতগুলো দিনের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি মাস। আর ১২টি মাস রূপ দান করে পূর্ণ একটি বছরের। সময় ও কালের চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে সূচনা হয় নতুন বছরের। আর নতুন বছরের আগমনকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়ে আসছে থার্টিফার্স্ট নাইট অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতের উৎসব।
আমাদের বাংলাদেশেও থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎসবমুখর পরিবেশ বেশ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে, বাঙালী যুবক-যুবতীদের মধ্যে এ রাতের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত। যা বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ উল্লাসের সাথেই উদযাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু মুসলিম মনে একটা প্রশ্ন জাগে, থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন কী ইসলাম সমর্থন করে?
মুসলিম জীবনের আনন্দ উৎসব আল্লাহর বিরুদ্বাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়; বরং তা নিহিত আছে আল্লাহর দেওয়া আদেশ-নিষেধ পালন করার মাঝে। ইসলাম বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেমন হাদিসে বর্ণিত- ”ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।” (সুনান আবু দাউদ: ৪০৩১, মিশকাত: ৪৩৪৭)
এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, থার্টিফার্স্ট নাইট এর প্রেক্ষাপট কী?
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর হাত ধরে সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উদযাপিত হয়। পরবর্তীতে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এর প্রচলন করেন। প্রথমদিকে ইংরেজি নববর্ষ বিভিন্ন দিনে, বিভিন্ন তারিখে উদযাপিত হলেও, পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিকে নির্দিষ্ট করা হয় নববর্ষের দিন হিসেবে। ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে থার্টিফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে।
এই প্রেক্ষাপট থেকে এটা নিশ্চিত যে, থার্টিফার্স্ট নাইট এর প্রচলন খ্রিষ্টান সংস্কৃতি থেকে এসেছে। যা একজন মুসলিম জীবনে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন, “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন তালাশ করে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না, আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আল-ইমরান: ৮৫)
এ রাত উদযাপিত হয় অশ্লীলতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পাপের সমাহারে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিটে উচ্চ আওয়াজে গান-বাজনা, আতশবাজি, পটকাবাজি, নারী-পুরুষের অশ্লীল ড্যান্স, অশালীন আচরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। এ ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত আছে যে, ”(হে নবী) আপনি বলুন, আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপকর্ম ও অন্য়ায়ভাবে জুলুম করাকে এবং এমন কোনো কিছুকে আল্লাহর সাথে শিরক করাকে, যার কোনো দলিল আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি।” (সূরা আরাফ: ৩৩) এ রাত্রির অন্যতম উপকরণ হলো- মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য। যা মানুষের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে, ব্যভিচারের মতো ঘৃণিত কজে ধাবিত করে। অথচ আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে বলেছেন, “তোমরা ব্যভিচারের ধারেও যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।” (সূরা বনি ইসরাঈল: ৩২)
ইতোপূর্বে এর নজির দেখেছি- ২০০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর রাত্রি ১২টা ২৫মিনিটে গুলশানে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক শ্লীলতাহানিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। এছাড়াও ২০০১ সালে শাওন আক্তার বাঁধন নামের এক মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। অথচ ইসলাম যাবতীয় নেশাদ্রব্যকে করেছে হারাম।
একজন মুসলিম জেনে-বুঝে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে গাঁ ভাসিয়ে নিজেকে কুফরে লিপ্ত করতে পারে না। কেননা, “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং এরপরও ঈমান আনে না।” (সূরা আনফাল: ৫৫) মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আল ইমরান: ৯১) একবার ভাবুনতো এই অবস্থায় যদি আপনার মৃত্যু হয়, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নামের ভয়ানক শাস্তি ও উত্তপ্ত আগুন।
অতএব সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক যে, থার্টিফার্স্ট নাইট নামক বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে নিজেকে রক্ষা করবে এবং পাশাপাশি নিজ পরিবার-পরিজনকেও এই পাপাচার থেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হবে। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার বর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” (সূরা আত-তাহরিম: ০৬) , অন্য আয়াতে বলেন, “আর তোমরা সে জাহান্নাম থেকে বাচোঁ, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।” (সূরা আল-ইমরান: ১৩১)
লেখক:
মোফাজ্জল হোসেন
সাবেক শিক্ষার্থী, উল্লাপাড়া কামিল (এম.এ অনার্স) মাদরাসা