উন্নত বিশ্বে নিয়োগের ক্ষেত্রগুলোতে প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, সৃজনীশক্তি, কর্মদক্ষতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে মুখস্ত বিদ্যার চেয়ে প্রায়োগিক যোগ্যতাকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। প্রার্থী যে পদে পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই পদে কি ধরণের সমস্যা তৈরি হয় এবং তা সমাধানে প্রার্থী কতটা দক্ষ সেটি সেখানে বেশ ভালোভাবেই যাচাই করা হয়। সেখানকার পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত পেশাদার এবং কাঠামোবদ্ধ। দক্ষতার পাশাপাশি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও প্রার্থী কতটা পারদর্শী, অফিশিয়াল সংস্কৃতি কতটা মেইনটেইন করতে পারবেন সেটাও বিশেষ বিবেচনায় থাকে। এ কারণেই তারা দক্ষ কর্মী পান, আউটপুটও ভালো আসে, মানুষ হয়রানীর শিকার হননা, অভিযোগও কম আসে।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ভিন্ন। এখানে চাকরির পরীক্ষায় নিয়োগের জন্য যে প্রশ্ন এবং প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তার সাথে চাকরির ক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের তেমন সামঞ্জস্য নেই। চাকরির পরীক্ষায় যে প্রশ্ন করা হয় চাকরি ক্ষেত্রে তার তেমন কোন প্রায়োগিক মূল্য নেই। এ কারণেই দক্ষ কর্মী তৈরি হয়না, কাজের ফলাফলও মানসম্মত হয়না।
অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি প্রার্থীদের মুখস্ত করার প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। কিন্তু এই মুখস্ত বিদ্যা কর্মক্ষেত্রের সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রাসঙ্গিক। অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে শ্রম দেয়ার ফলে মেধা সম্পদ এবং সময় ক্ষয় হয়।
তাই বাংলাদেশের চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের পরিবর্তন আবশ্যক। যে প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ দিবে তাকে ঐ প্রতিষ্ঠানের ধরণ, কর্মের ধরণকে বিবেচনা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু মুখস্ত বিদ্যা নয় কেবল ঐ সেক্টরে দক্ষ, সমস্যা সমাধানে পটু এমন কর্মীরাই যেন নিয়োগ পায় সেটা নিশ্চিত করা গেলে দক্ষ কর্মী তৈরি হবে, কাজের মান ভালো হবে।
অদক্ষ কর্মী নিয়োগ পায় বলেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তি দুর্বল হয়। এতে সেবা এবং উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয়। দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে দক্ষ কর্মী আবশ্যক। আর দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে গতানুগতিক প্রক্রিয়াটা অবলম্বন করা হয় সেখানে বড় ধরণের সংস্কার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বিশাল কর্মক্ষম এবং সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী রয়েছে। যার অধিকাংশই তরুণ। কিন্তু তরুণদের মধ্যেই বেকারত্বের হার বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি বেকার রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জনশক্তিকে কার্যকর ভূমিকায় নিয়ে না আসতে পারলে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। তাঁদেরকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষাব্যবস্থা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন। শিক্ষা পদ্ধতিতে কর্মক্ষেত্রের উপযোগী বিষয় আবশ্যিক করে দিতে হবে। শিখন প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া দুটোই যেন সম্পূরক এবং সামঞ্জস্য হয় সে বিষয়টাকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিতে পারলে বেকারত্বের সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে, উদ্যোক্তাও তৈরি হবে।
আমরা বিভিন্ন জায়গায় সেবা নিতে গিলে প্রায়ই কর্মকর্তাদের অপেশাদার আচরণ লক্ষ্য করি। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাই। যোগাযোগের ক্ষেত্রটাতে আমাদের নৈতিকতার একটা বড় ঘাটতি দেখা যায়। চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তা পর্যন্ত সব জায়গায় এটা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই আমাদের মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রত্যেক প্রফেশনেই অন্তত যোগাযোগের মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলা জরুরি। এই নীতিগুলোকেও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ধরা প্রয়োজন। প্রফেশনে সদাচার চর্চার নীতির প্রয়োগ ঘটানো গেলে কেউ আর হয়রানি হবেনা।
লেখক
জাহিদুল ইসলাম আকাশ
সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়