পৃথিবী হলো একটি রঙ্গমঞ্চ। এখানে মানুষ বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করে। কেউ ভালো কাজ করেও অনেক সময় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না। আবার কেউ অত্যাধিক সুন্দর করেও কাজ না করেও কিছু বিষয় নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে পৃথিবীতে একজন চমৎকার মানুষ হয়ে উঠতে পারে। সবাই চায় চমৎকার মানুষের সান্নিধ্য। কারণ পৃথিবীতে এই প্রকারের মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। তবে আমরা যদি নিচে উল্লেখিত পাঁচটি নীতি অনুসরণ করতে পারি, তবে কোনো না কোনো দৃষ্টিতে আমরা একজন চমৎকার মানুষ হয়ে উঠব।
১. মনের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ রাখা
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন মন্দ আচরণ থেকে বিরত থাকি শুধু এই ভয়ে, অন্য কেউ আমাকে খারাপ বলতে না পারে। কিন্তু মন থাকে অতি কলুষিত। কারণ মন কেউ দেখতে পায় না। তবে স্বয়ং নিজেই মনকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যখন ভালো কিছুর পরিবর্তে খারাপ কিছু মনে ঘটে, তখন মানুষ এক ধরনের মানসিক চাপে থাকে। ফলে সে যতই চমৎকার মানুষের ভান ধরুক, প্রকৃত অর্থে সে তা হয়ে উঠতে পারে না।
২. অযথা প্রতিজ্ঞা করা থেকে বিরত থাকুন
আস্থাশীল ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো প্রতিজ্ঞা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। প্রতিজ্ঞা হলো এমন একটি অঙ্গীকার, যা ভঙ্গ করা যায় না। ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিজ্ঞা রক্ষা সম্ভব হলে তবেই তা করুন। মজা বা হেলাফেলার সাথে যার কোনো সংযোগ নেই, সেটিই প্রতিজ্ঞা। সুতরাং প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন এবং প্রতিজ্ঞা রক্ষা করুন। যদি এতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন, তবে অবশ্যই আপনি একজন চমৎকার মানুষে পরিণত হবেন।
৩. জীবনের উচ্চতর মাত্রাকে স্পর্শ করুন
জীবন হলো একটি উচ্চমানের শিল্প। যদি আপনি জীবনের মানকে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে না পারেন, তবে সে জীবন হবে উপযোগীহীন। আনন্দ, বিলাসিতা বা অন্যান্য বৈষয়িক বিষয় থাকতে পারে, তবে গভীর জ্ঞান বা প্রজ্ঞার অভাব থেকে যাবে। প্রজ্ঞার ওপর ভর করেই মানুষ পার্থিব জগতে থেকে অপার্থিব জগতের অনুভূতি লাভ করতে পারে এবং এক উচ্চমানের জীবন অর্জন করতে পারে। কাজেই জীবনে যেমনই থাকুন, জীবনের উচ্চতর মাত্রাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
৪. গুণ খুঁজে বের করুন
মানুষের চরিত্রের একটি সাধারণ প্রকৃতি হলো, তারা অন্য মানুষের গুণের চেয়ে দোষ আগে দেখে। তবে আমাদের মনে রাখা উচিত, দোষে-গুণে মানুষ। যদি আপনি দোষের পরিবর্তে মানুষের গুণকে আগে উদ্ভাসিত করতে পারেন, তবে বুঝবেন আপনি একজন চমৎকার মানুষ। দোষ বলা সহজ এবং এটি অনেকের জন্য নেশাস্বরূপ। কিন্তু গুণ বলা ও প্রশংসা করতে হলে তাকে মহৎ ও উদার হতে হয়। আর যখন আপনি অন্যের সত্যিকারের প্রশংসা করতে পারবেন এবং তার মন্দ গুণ উপেক্ষা করবেন, তখনই আপনি চমৎকার মানুষ হয়ে উঠবেন।
৫. সর্বদা সততা বজায় রাখুন
সততা এমন এক গুণ, যা নিজস্ব রঙে উজ্জ্বল। আমাদের চরিত্রে যদি এই গুণটি থাকে, তবে অন্য সবকিছু আপনাআপনি উত্তম হয়ে ওঠে। কোনো মানুষ যখন তার কথা, কাজ, চিন্তা ও জীবনযাপনে সৎ হয়, তখন পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই, যা তাকে হারাতে পারে। সততা হলো হিরার মতো, যা নিজের আলোয় উজ্জ্বল। সত্যের সাথে থাকা কঠিন হলেও এটি ইস্পাত-কঠিন ব্যক্তিত্ব দান করে, যা কেউ পছন্দ না করলেও নিন্দা করতে সাহস পায় না। এজন্য সক্রেটিস বলেন, “সত্যপ্রীতি বিজ্ঞতার লক্ষণ।”
সুতরাং, আমরা যদি আমাদের জীবনাচরণে এই পাঁচটি গুণ সর্বদা চর্চা করি এবং সে অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করি, তবে যারা আমাদের নিন্দুক, তারাও পিছনে আমাদের চমৎকার মানুষের তকমা দেবে। সত্য ও সুন্দর সবসময় জয়ী হয়। সুতরাং, সত্যের সাথে থাকুন, সুন্দর হয়ে উঠুন। যার জীবনের চমৎকারত্বই পৃথিবীকে অবাক করে দেবে।
লেখক
ড. রেবেকা সুলতানা
অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।