আমরা সকলেই কমফোর্ট জোনে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু কমফোর্ট জোনে থেকে কখনও সফল হওয়া যায়না। তাই এই জোনটা ভাঙা জরুরি। কিন্তু এটা অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হতে গেলে কিছু নীতি মেনে চলতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও জনপ্রিয় অনুপ্রেরণামূলক বক্তা ড. রেবেকা সুলতানা কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
ঝুঁকি নেয়াঃ নিজের মন থেকে আন্তরিকভাবে ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুঁকি দেখলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে কাজে ঝুঁকি আছে, সে কাজে সফলতাও আছে। ঝুঁকির কাজে সফলতাও বেশি থাকে। যে কাজে ঝুঁকি যত কম তার মূল্যও তত কম। কাজেই যখন আপনি সাহস করে ঝুঁকি নিতে পারবেন তখন আপনি কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন, নতুন কিছু করতে পারবেন।
শক্তিশালী কল্পনাশক্তি সৃষ্টি করাঃ আমাদের মস্তিস্ক, অবচেতন মন কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা, কোনটি কল্পনা এটিকে খুব বেশি আলাদা করতে পারেনা। কাজেই শক্তিশালীভাবে আমি যে চিন্তাটি করব, যে কল্পনা করব, যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকব সেই বিষয়টিই কিন্তু আমার জীবনে বাস্তব হয়ে উঠবে। কারণ অবচেতন মন সেটিই নিয়ে নেয়, বাস্তবতার সাথে সেটিকে গড়ে তুলে এবং সেটিকে তার কাছে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে।
জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিঃ যদি জ্ঞান না থাকে তাহলে মানুষ দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনা। জ্ঞানটি যখন আমরা তাত্ত্বিকভাবে অর্জন করি, সেটাকে যখন আমরা বাস্তবে প্রয়োগ করি তখনই আমাদের দক্ষতা প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ জ্ঞান ও দক্ষতা এ দুটি যখন একসাথে কাজ করবে তখনই কিন্তু আমি একটা জায়গায় সফল হয়ে উঠবো। এই জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হলে আমাদের গতানুগতিক শান্তিপূর্ণ জীবন এবং অনুকূল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য পরিশ্রম করতে হবে।
নতুন বিষয় সম্পর্কে পরিচিত হওয়াঃ যখনই আপনি নতুন কোন স্টেপ নিবেন তখনই আপনাকে নতুন বিষয়, নতুন পরিবেশ, নতুন বই, নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হতে হবে। সেখানে ভয় পেলে চলবেনা যে, আমি একাই কিভাবে এই নতুন বিষয়টিকে নিবো, নতুন জায়গায় যাবো বা নতুন বিষয়টি অর্জন করব। শুধুমাত্র সাহস করে নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে। অর্থাৎ নতুন নতুন পরিবেশে যাওয়া, নতুন নতুন জ্ঞান নেয়া, নতুন নতুন মানুষের সাথে কন্ট্যাক্ট বাড়ানোর চেষ্টা করা, তার অভিজ্ঞতা জেনে নেয়া- এই বিষয়গুলো সাহসের সাথে করতে হবে। তখনই কিন্তু আপনি কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
প্রাত্যহিক রুটিনে পরিবর্তনঃ আপনার জীবনের গতানুগতিক যে রুটিনটি আছে, গতানুগতিক যে কাজ করেন সেখানে একটি পরিবর্তন আনতে হবে। আপনি যদি দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করেন, সেখানে আপনার কাজের সীমা বাড়াতে হবে। আপনার সাচ্ছ্যন্দের জন্য, জীবনের উন্নয়নের জন্য আপনাকে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হবে। প্রথমে হয়ত কঠিন মনে হবে। কিন্তু নিজেকে অভ্যস্ত করতে পারলে এটা আর অসম্ভব মনে হবে না।
নেপোলিয়ন হিল বলেছেন, ‘সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন না এটি কখনই আসবে না।’ কাজেই আমরা কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার জন্য সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করব না। যখনই আমাদের মনে হবে আমাদের নতুন কিছু করতে হবে, তখনই আমাদের কাজটি শুরু করতে হবে। বসে থাকা যাবেনা। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা আছে, “Great things never came from comfort zone”. সুতরাং কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন এবং নিজের জীবনকে সাফল্য ও সার্থকতায় ভরিয়ে ফেলুন।