বাঙালি আরাম প্রিয় মানুষ। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় এই জায়গার মানুষ সব সময় খাওয়া, ঘুম নিয়ে সুখের জীবন কাটাতে চায়। কিন্তু এভাবে কি আর দিন চলে? স্বাভাবিকভাবে একটা মানুষ জন্মের পর কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে। শিশু থেকে কিশোর-কিশোরী, কিশোর-কিশোরী থেকে যুবক-যুবতী আর শেষে আসে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। শিশু এবং কিশোর বয়সে থাকতে হয় একাডেমিক পড়াশোনা। এই সময়ে তারা সম্পূর্ণ কর্মবিমুখ থাকে। অলসতা তাদের মধ্যে জেঁকে বসে। ক্লাসের পড়ায় ক্লান্তি আর বিরক্তি থাকায় পাঠের প্রতিও তেমন মনোযোগ থাকেনা। ফলে নানা অজুহাতে পাঠ সম্পন্ন করা থেকে তারা বিরত থাকে এবং ক্লাসেও ফাঁকি দেয়। বাবা মায়ের কড়া শাসনে ও তারা সেখানে মনোনিবেশ করতে চায় না।
কিন্তু সেই শিক্ষার্থীরাই যখন কর্মজীবনে আসে তখন বেশিরভাগই অত্যন্ত কর্মঠ ও উৎসাহী হয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, একাডেমিক কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় সাধারণত থিওরেটিক্যাল পড়াশোনার প্রতি কম আগ্রহের কারণে। কর্মজীবনে মানুষ যখন বাস্তব জীবনের সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ ও আগ্রহ বেড়ে যায়, কারণ তারা সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। কিন্তু একাডেমিক পড়াশোনায় সাধারণত তত্ত্ব ও তত্ত্বীয় বিশ্লেষণ বেশি থাকে, যা অনেক সময় প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় না এবং এতে আগ্রহ হারিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, ছাত্র জীবনে একাধিক দায়িত্ব এবং পড়াশোনার চাপ অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি সৃষ্টি করে। ছাত্রদের হাতে কম সময় থাকায় তারা একাডেমিক কাজের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও মনোযোগ দিতে পারে না, ফলে অলসতা সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়ত, কর্মজীবনে মানুষ যখন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করেন, তখন তাদের মধ্যে একটি লক্ষ্য অর্জনের তাগিদ থাকে। একাডেমিক জীবনে সেই ধরনের স্পষ্ট লক্ষ্য বা বাস্তব ফলাফলের অভাব থাকে, যার কারণে অনেক সময় পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ কমে যায়।
কিন্তু যখন ওই ছেলেমেয়েগুলো কর্ম জীবনে ঢুকে তারা তখন টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা অক্লান্ত পরিশ্রমেও পিছপা হয় না।
কর্মজীবনে মানুষ যখন কর্মঠ থাকে, তখন তাদের একাডেমিক জীবনে অনীহা বা অলসতা অনুভূতির পেছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণ রয়েছে। কর্মজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়ার পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে, যা একাডেমিক জীবনের অনীহাকে প্রভাবিত করে।
প্রথমত, কর্মজীবনে মানুষের সামনে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য থাকে, যা অর্জনের জন্য তারা চেষ্টা করেন। তারা জানেন, তাদের কাজের ফলস্বরূপ অর্থ উপার্জন, সামাজিক মর্যাদা বা ক্যারিয়ার বৃদ্ধির সুযোগ পাওয়া যায়। তবে একাডেমিক জীবনে অনেক সময় এই ধরনের স্পষ্ট লক্ষ্য থাকে না, ফলে আগ্রহ হারিয়ে যায়। শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের যোগসূত্রের অভাব একাডেমিক অনীহার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয়ত, কর্মজীবনে সাধারণত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ দক্ষতা অর্জন করে এবং কাজটি তাদের পছন্দের হয়, যার ফলে তারা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একাডেমিক জীবনে এই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করা কঠিন, কারণ অধিকাংশ সময় তত্ত্বীয় পড়াশোনা করা হয়, যা বাস্তব জীবনের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত থাকে না।
তৃতীয়ত, কর্মজীবনে মানুষ যখন তাদের কাজের জন্য সরাসরি পুরস্কৃত হন-যেমন, অর্থ, পদোন্নতি বা কাজের স্বীকৃতি-তারা আরও উৎসাহী হয়ে কাজ করেন। কিন্তু একাডেমিক জীবনে শুধু মাত্র পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া এই ধরনের পুরস্কারের অভাব থাকায়, অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হন না।
লেখকঃ যায়েদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি।