বাংলাদেশের এমন কোন স্থান নেই যেখানে মশা নেই। মশারা সুযোগ পেলেই কানের আশেপাশে দলবেঁধে এসে অসহনীয় গুঞ্জন শুরু করে, শরীরে বসে রক্ত চুষে। তাদের চুলকানিযুক্ত কামড় খেয়ে অস্বস্তি লাগে, বিরক্তি আসে। কখনও সে কামড়ে রোগও হয়।
এখনকার সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু জ্বর, যা এডিস নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এদেশে চলতি বছর ৪৩৬ জন মারা গেছেন। হাসপাতালের বিছানায় এখনও কাতরাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
মশা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতে রয়েছে। তবে পৃথিবীতে একটি মাত্র দেশ রয়েছে যেখানে কোন মশা নেই। দেশটির নাম আইসল্যান্ড। এ দেশে কেন মশা নেই কিইবা তার রহস্য এর কোন সঠিক এবং নিশ্চিত উত্তর নেই। মশার প্রজননের জন্য যা যা লাগে (পুকুর,হ্রদ ইত্যাদি) তার সবই দেশটিতে রয়েছে কিন্তু মশা সেখানে নেই। আইসল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশগুলো — নরওয়ে, ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ড, এমনকি গ্রিনল্যান্ডেও মশা রয়েছে। এই ব্যাপারটা বিষয়টিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছে, আইসল্যান্ডের মহাসাগরীয় জলবায়ু মশাদের দূরে রাখে। মশা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ডিম পাড়ে এবং তাপমাত্রা বেড়ে গেলে লার্ভা বেরিয়ে আসে, যা তাদের প্রজনন এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে আইসল্যান্ডে সাধারণত বছরে তিনবার বরফ জমে এবং গলে, যা সম্ভবত মশার টিকে থাকার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
অনেকে মনে করেন, হয়তো আইসল্যান্ডের মাটি ও পানির রাসায়নিক গঠনেই এমন কিছু রয়েছে যা মশাদের সহ্য হয় না।
আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী গিসলি মার গিসলাসন বলেছেন, এই পরিস্থিতি হয়তো বেশিদিন টিকবে না। গত ২০ বছরে আইসল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়েছে এবং এই সময়ে ২০০ নতুন প্রজাতির পোকা আইসল্যান্ডে বসবাস শুরু করেছে যা আগে সেখানে টিকে থাকতে পারেনি। তিনি বলেন, “যদি উষ্ণায়ন অব্যাহত থাকে, আমরা শীঘ্রই আইসল্যান্ডে মশা দেখতে পাব।”
এখনও পর্যন্ত আইসল্যান্ডে মশা খুঁজে পাওয়ার একমাত্র জায়গা হলো আইসল্যান্ডিক ইন্সটিটিউট অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি। সেখানে অ্যালকোহলে সংরক্ষিত একটি মাত্র মশা রয়েছে, যা ১৯৮০-এর দশকে গিসলাসন ধরেছিলেন। এটি তিনি আইসল্যান্ডের একটি বিমানবন্দরে গ্রিনল্যান্ড থেকে আসা একটি বিমানের ভিতরে পেয়েছিলেন।
গিসলাসন জানান,“আমি বিমানের কেবিনে এটি তাড়া করেছিলাম যতক্ষণ না এটি ধরতে পারি । এটি আইসল্যান্ডে খুঁজে পাওয়া একমাত্র মশা।”
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস