ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ডিপার্টমেন্ট যেখানে অধিকাংশ কর্মঠ ও সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা পড়ে থাকেন। বর্তমানে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অনেকেই জানে না কিভাবে এই ডিপার্টমেন্ট থেকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলে যায়। আর এ বিষয়গুলোই চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব নিউফাউন্ডল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব এডুকেশনের, রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট আসাদ খান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।
ইংরেজি বিভাগঃ
ইংরেজি বিভাগ একটি প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ শাখা যা মূলত ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ভাষাতত্ত্বের গবেষণায় নিবেদিত। শুরু থেকেই ইংরেজি বিভাগ শিক্ষার্থীদের দক্ষ ভাষার ব্যবহার ও সাহিত্যিক চিন্তা-ভাবনার দিকে পরিচালিত করে। এ বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ তৈরি করে এবং আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগের দক্ষতা অর্জন করে।
কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়ঃ
ইংরেজি বিভাগের পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন দিকের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন: ভাষাতত্ত্ব, সাহিত্য (বিশ্বসাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য, উপনিবেশবাদী সাহিত্য) ন্যারেটিভ থিওরি, ক্রিটিক্যাল থিওরি, ভাষা শিক্ষা, সাহিত্যিক বিশ্লেষণ, এবং আধুনিক ইংরেজি সাহিত্য। এছাড়াও ভাষার ব্যবহার, লেখালেখি এবং মৌখিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কোর্স রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের আরও পরিপূর্ণ ভাষাগত দক্ষতা প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ের উপর স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীতে অধ্যয়নকালীন পছন্দ অনুযায়ী কনসেন্ট্রেশন বা মেজর কোর্স নির্বাচন করতে পারে। মূলত ভাষা ও সাহিত্য দু’টি আলাদা বিভাগ থাকলেও আমাদের দেশে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একীভূত করেই পড়ানো হয়। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভাষাতত্ত্ব (Linguistics), ফলিত ভাষাতত্ত্ব (Applied Linguistics), ইংরেজি ভাষা শিক্ষণ (English Language Teaching), অন্য ভাষাভাষী ব্যক্তিদের ইংরেজি শেখানো (Teaching English to Speakers of Other Languages) কিংবা ইংরেজি ভাষা শিক্ষা (English Language Education) এর উপর বিশেষায়িত কোর্স করিয়ে থাকে যা প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চাকুরির সুযোগ-সুবিধাঃ
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশে এবং বিদেশে নানা ধরনের চাকরি পেতে সক্ষম। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা তাদের জন্য মিডিয়া, ট্যুরিজম, জনসংযোগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা, শিক্ষা এবং গবেষণার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ তৈরি করে। এছাড়াও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক, সাহিত্য সমালোচক, প্রুফরিডার, ইন্টারপ্রিটার, ট্রান্সলেটর, ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এন.জি.ও, ব্যাংক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোতে এবং সরকারি ক্যাডার/নন-ক্যাডার-এর বিভিন্ন পদে রয়েছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের আবেদন এর সুযোগ। সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর চাকুরীর বিজ্ঞাপন গুলোতেও ইংরেজি বিষয়ের চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। এসব চাকুরীতে এডুকেশন কোর থেকে কমিশন্ড সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ পদায়ন করা হয়। তাছাড়াও নিজের মধ্যে প্রধান ৪ টি ভাষা দক্ষতা উন্নত করতে পারলে রয়েছে ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের অবারিত সুযোগ। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে ইংরেজি বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটদের অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে উল্লেখ্য যে ডিগ্রী অর্জন ও দক্ষতা অর্জন দু’টি ভিন্ন বিষয়। ডিগ্রী বিহীন দক্ষতা কিংবা দক্ষতা ব্যতীত ডিগ্রী কোনটিই প্রকৃত সফলতা এনে দিতে পারেনা। তাই ইংরেজি বিষয় নিয়ে সফল ক্যারিয়ার করতে হলে ডিগ্রী ও দক্ষতা উভয়টির প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধাঃ
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত একাডেমিক পিয়ার-রিভিউড জার্নালগুলোতে গবেষণা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার ও প্রকাশ হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উন্নতির জন্য সেরা সুযোগ প্রদান করে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই গবেষণা কাজের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের গবেষণা সহকারি বা গবেষণার নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ শুরু করা উচিত। তাছাড়া কোন জার্নাল বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর সাথে কাজে যুক্ত হতে পারলে সেটা রিজ্যুমি ও ক্যারিয়ার উভয়টির জন্যই ইতিবাচক। তবে ভাষাগত দক্ষতা ভাল না হলে গবেষণার কাজে অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন সহজ নয়।
কী কী দক্ষতা অর্জন করা যায়ঃ
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে-
ক. ভাষাগত দক্ষতাঃ ইংরেজি ভাষার চারটি প্রধান দক্ষতা অর্জন করা।
খ. যোগাযোগ দক্ষতাঃ লেখনী এবং মৌখিক প্রকাশের ক্ষেত্রে উন্নতি।
গ. সমালোচনামূলক চিন্তাঃ সাহিত্য ও ভাষা বিষয়ক বিভিন্ন তত্ত্বের ওপর বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা।
ঘ.সাংস্কৃতিক ও মানবিক জ্ঞানঃ বিভিন্ন দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক বিষয় সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া।
ঙ. অ্যাকাডেমিক লেখালেখিঃ গবেষণা পত্র, নিবন্ধ ও প্রতিবেদন লেখার দক্ষতা।