গত ১৩ মার্চ নেটফ্লিক্সে প্রিমিয়ার হয় ফিলিপ বারান্তিনি পরিচালিত ক্রাইম ড্রামা সিরিজ অ্যাডোলসেন্সের। মুক্তির এক মাস পার হয়ে গেলেও এই ড্রামা সিরিজ নিয়ে আলোচনা থামেনি। হলিউড, বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা থেকে শুরু করে সরকারপ্রধানরাও এই সিরিজ নিয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু কী আছে এতে?
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কিশোর বয়সে কিশোর-কিশোরীদের মনোজগত, আচরণ এবং সোস্যাল মিডিয়ার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্রভাব সিরিজটিতে স্পষ্ট হয়েছে। ৪টি পর্বে সাজানো এই সিরিজের প্রত্যেকটি পর্ব ওয়ান টেইকে নেয়া হয়েছে। এই কঠিন কাজটি পরিচালক কিভাবে এতো সহজে তুলে আনলেন তা নিশ্চয়ই ভাববার বিষয়।
সিরিজের শুরুতে ১৩ বছর বয়সী জেমি মিলারকে তার সহপাঠীকে হত্যার দায়ে আটক করে পুলিশ। সন্তানের অপরাধ, জেলজীবন পরিবারের জন্য কতটা অসহনীয় হয়ে ওঠে সেটিই দেখানো হয়েছে সিরিজটির প্রথম পর্বে।
সিরিজটির ঘটনা এগিয়েছে জেমি মিলার কেন খুনটা করলো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে। বুঝতে চেষ্টা করা হলো জেমির মনোজগতকে। সে কি ভাবছে? তার জগতটা কেমন? জেমির অবয়বে গোটা তরুণ সমাজকে প্রতিস্থাপন করেছেন পরিচালক।
জেমি খুঁজে খুঁজে ইন্সটাতে আবেদনময়ী নারী মডেলদের অনুসরণ করতো। তাদের ছবি দেখে সে সময় কাটাতো। এসব তার মাথায় যৌনতার বীজ বুনে দেয়। যখন তার সহপাঠীরা টপলেস ছবি দেখিয়ে তাকে বিদ্রুপ করে তার ভেতরে তৈরি হয় প্রবল আগ্রাসন। কেননা সে নিজেকে অসুন্দর, অযোগ্য মনে করে। যা ইনসেল সংস্কৃতিকে রিপ্রেজেন্ট করে।
ইনসেল সংস্কৃতি হলো নিজের আকাঙ্ক্ষা থাকার পরেও সঙ্গী খুঁজে না পাওয়া এবং তা নিয়ে অন্যদের বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য। যা ভুক্তভোগীকে আরও বিষিয়ে তুলে, আরও রাগিয়ে দেয়। সেখান থেকে তার মধ্যে বড় অপরাধে জড়ানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সিরিজে দেখানো হয়েছে, স্কুলের বুলিং সংস্কৃতিকেও। উঠে এসেছে নারী বিদ্বেষ, উগ্র পুরষত্ব, আলফা মেইল ধারণাগুলোও। সন্তানদের সময় না দিলে, তাদের যত্ন না নিলে, তারা সোস্যাল মিডিয়ায়, ইন্টারনেটে কি করছে সেটি খোঁজ না নিলে কি ধরণের বিপর্যয় হতে পারে এই সিরিজে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে।
জেমি মিলার চরিত্রে ১৫ বছর বয়সী ওয়েন কুপার অসাধারণ অভিনয় করেছে। জানা গেছে, এই চরিত্রের জন্য পরিচালক ৫০০ জনের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। বিশেষ করে তৃতীয় পর্বে নারী মনোবিদের সাথে টানা একঘন্টা এক শটে তার কথা বলা, সিকুয়েন্স ধরে রাখা, লজিক, প্রতিক্রিয়া দর্শককে দারুণ ভাবাবে।